“কাবুলিওয়ালা ও মিনি”
-অঞ্জনা গোড়িয়া
“দিদি” তুই “কাবুলিওয়ালা” দেখেছিস কোনো দিন? কেমন দেখতে রে? মাথায় পাগড়ি আর লম্বা দাঁড়ি?
কী ব্যাপার “ছুটি” আজ “একরাত্রি” “হৈমন্তী”র বোনের বিয়েতে গিয়ে এসব কী বলছিস? এসব কী প্রশ্ন করছিস?
সে অনেক কাহিনী দিদি। সব বলছি।আমি তো বিয়ে দেখবো বলেই গেছিলাম। যেই মাত্র “শুভদৃষ্টি ” “মাল্যদান” শুরু হবে, পাত্রের “ঠাকুরদা” “দেনা-পাওনা” নিয়ে গন্ডগোল শুরু করে দিলেন।
যা যা দেওয়ার কথা ছিল, তা নাকি কিছু কম আছে। তাছাড়া পাত্রপক্ষ সংবাদ পেয়েছিল পাত্রীর বাবার প্রচুর “গুপ্তধন” আছে। সেই আশায় বিয়েতে রাজি হয়েছিল।
কিন্তু এখন আর কিছুতেই বিয়ে হবে না।
পাত্রের ঠাকুরদা একেদিকে “ডিটেকটিভ” অন্যদিকে “প্রফেসর”। তবু পাত্রকে বিয়ের আসর “ত্যাগ” করতে বাধ্য করলো। অনেক চেষ্টা করেও বরের “মানভঞ্জন” করা গেল না। পাত্র ও পাত্রীর বয়সের “ব্যবধান” ছিল অনেক। সকলেই চেয়ে ছিল “আপদ” বিদায় হলেই বাঁচি। পাত্রীও অভিমানে “ক্ষুধিত পাষাণ” হৃদয়ে “মুক্তির উপায়” খুঁজতে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল।
বিয়েটা ভেঙে গেল।
“অতিথি”-রা একে একে বিদায় নিতে চাইলো। আসলে পুরানো একটা “প্রতিহিংসা”র কারণে পাত্রীর বাবাকে “শাস্তি” দিতেই বিবাহ অনুষ্ঠানটা “সমাপ্তি” হলো।
“দিদি”শুনে চেঁচিয়ে উঠলো, “অসম্ভব কথা” তুই আমাকে “একটা আষাঢ়ে গল্প” শোনাচ্ছিস?
আগে শোন সবটা। তারপর বলছি। পাড়ার “পোস্ট মাস্টার” একটা “খাতা” ও চিঠি নিয়ে “প্রবেশ” করলো।
“পোস্টমাস্টার” চিঠিটা পড়তে শুরু করলেন।
যদিও হিন্দিতে লেখা। আমাদের বোঝার সুবিধার জন্য বাংলায় পড়ে শোনালেন।
মহাশয়,
আমার “ভিক্ষারিনী” মেয়ে সুভা”র “দৃষ্টিদান”-এর জন্য বেশ কিছু অর্থ দিয়েছিলেন। তাই নিয়ে আমি দেশে ফিরে ছিলাম। বাড়ি ফিরে মনটা “দুরাশায়” ভরে গেল। সে গৃহ আর নেই। এখন “নষ্ট নীড়”।কন্যা “সুভা”ও আর জীবিত নেই।
তাই আপনার এই “দান -প্রতিদান’ স্বরূপ এই অর্থ কোনো কাজেই লাগলো না। আপনার কন্যা “মিনি”র বিয়ের উপহার হিসেবে পাঠালাম। ও আমার বেটি ছিল বাবু। আমিও ওর বাবা বটে। মিনির জন্য আমার অনেক অনেক প্যায়ার। “গিন্নী”মা যেন আমাকে ক্ষমা করেন। উনি আমার কাছে দেবী “মহামায়া”। আমার প্রণাম দেবেন।
ইতি — দুঃখী “কাবুলিওয়ালা”।
“সদর ও অন্দরে” ততক্ষণে কান্নার রোল শোনা যাচ্ছে। পাত্রীর বাবা উপহার হিসেবে টাকাগুলো ফিরে পেয়ে আবার বিয়ের আয়োজন করতে লাগলেন।
এ দিকে কন্যা মিনি “নারী ব্যক্তিত্বের মুক্তিসাধনা” করতে বদ্ধপরিকর। আর কিছুতেই বিয়ে করবে না। তাই অভিভাবকের কথায় জবাব দিতে “অনধিকার প্রবেশ” করলো। মাথার “মুকুট” খুলে ফেললো।
গলাটা “মনিহারা”। সবাই চিন্তিত, কন্যা যে লগ্নভ্রষ্টা হবে। এখন “উপায়”? “সমস্যাপূরণ” করতে পাত্রের ঠাকুরদা আবার নিজেই এগিয়ে এলেন। সেই সঙ্গে কাবুলিওয়ালার মহানুভবতার পরিচয় পেয়ে নিজে লজ্জিত হলেন।
নিজের ভুলের “প্রায়শ্চিত্ত” করতে আবার বিয়ের আয়োজন করলেন।
“খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন” এর মতো বরের আবার আবির্ভাব ঘটলো।
“বিচারক”এর আসনে সেই “ঠাকুরদা”।পণপ্রথা বিরোধিতা করে কন্যার কাছে ক্ষমা চাইলেন।
“রাজটিকা” পড়িয়ে দিলেন পুরোহিত।
“জয়-পরাজয় “শেষে “মেঘ-রৌদ্র’-র মাঝেই “মিনি”র বিবাহ ‘সমাপ্তি হলো “রবিবার”-এর “নিশীথে”।